
কক্সবাজার-১ আসনে ড. মাইমুল আহসান খানের মনোনয়ন, এনসিপির কি ‘মাথা মোটা’ সিদ্ধান্ত?
আসন্ন নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে ন্যাশনাল কনসেনসাস পার্টি (এনসিপি) কর্তৃক ড. মাইমুল আহসান খানকে (ম্যাক) মনোনয়ন দেওয়ায় দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কৌশল নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে। একদিকে এই আসনে যেখানে বিএনপির অত্যন্ত জনপ্রিয় ও আকাশচুম্বী প্রার্থী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, অন্যদিকে ড. ম্যাকের মতো জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত একজন প্রার্থীর স্থানীয় সংযোগের অভাব নিয়ে চলছে আলোচনা। সমালোচকদের মতে, এনসিপির এই সিদ্ধান্ত হঠকারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
ড. মাইমুল আহসান খানের ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনের দীর্ঘ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাঁর জন্মস্থান চাঁদপুর, ঢাকার উত্তরায় তাঁর স্থায়ী বাসস্থান। কর্মজীবনের শেষ দিকে তিনি সিলেটে চাকরি করেছেন এবং করোনা মহামারীর সময় ঠাকুরগাঁওয়ে কয়েকমাস অবস্থান করেছেন। তাঁর এই বিস্তৃত ভৌগোলিক বিচরণের বিপরীতে কক্সবাজার-১ আসনের জনগণের সঙ্গে তাঁর সরাসরি এবং গভীর কোনও সংযোগ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, ড. ম্যাকের মতো ব্যক্তিত্বকে যদি মনোনয়ন দিতেই হতো, তবে এনসিপি তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর, অথবা তাঁর কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা কিংবা তাঁর ঢাকার বাসস্থানের কাছাকাছি কোনো আসনে দিতে পারত। এমন পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের মতো একটি কঠিন আসনে তাঁকে দাঁড় করানোকে অনেকে ‘রাজনৈতিক চাল’ হিসেবে দেখছেন, যার ফলস্বরূপ তিনি পাঁচ হাজার ভোট পাওয়াতেও কষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই কিছু ‘ভুঁইফোড়’ মিডিয়া ড. ম্যাক এবং সালাহউদ্দিন আহমেদের মধ্যে একটি ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক তুলে ধরার চেষ্টা করে একটি ভুল ন্যারেটিভ তৈরি করতে শুরু করে। উভয়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (DU) প্রাক্তন ছাত্র হওয়ায় এই গুজব দ্রুত ছড়ায়।
তবে তথ্য যাচাই করলে দেখা যায়, সালাহউদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র হিসেবে ১৯৮০ সালে ভর্তি হন এবং ১৯৮৬ সালে এলএলএম ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এর বিপরীতে, ড. মাইমুল আহসান খান সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন ১৯৯০ সালে—সালাহউদ্দিন আহমেদের ডিগ্রি অর্জনের চার বছর পর। সে হিসেবে তাদের মধ্যে সরাসরি ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক থাকার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি থাকলেও নির্বাচনে এর কোনো বিশেষ গুরুত্ব থাকতো না।
সমালোচকদের প্রশ্ন, ড. ম্যাকের মতো প্রবীণ এবং শিক্ষাবিদকে যদি এনসিপি সম্মান জানাতে চাইত, তবে উচ্চকক্ষে (Upper House) নমিনেট করার সুযোগ ছিল। কিন্তু এই বয়সে তাঁকে এমন একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং জটিল ‘সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে’ (কনফ্লিক্ট জোন) নির্বাচনে নামিয়ে এনসিপি আসলে কী অর্জন করতে চাইছে?
এই আসনটিতে জয়ের বাস্তব সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বেও এত বড় ঝুঁকি নেওয়ার বিষয়টিই এনসিপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ‘মাথা মোটা সিদ্ধান্ত’ কি না, সেই প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, এটি হয়তো কোনও বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য করা হয়েছে, যেখানে মূল লক্ষ্য জয় নয়, বরং অন্য কোনও রাজনৈতিক সমীকরণ।
পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় সংযোগবিহীন এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বীর সামনে দুর্বল অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও এমন মনোনয়ন দেওয়াটা দলের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের দুর্বলতাকেই প্রকট করে তুলেছে।
সমালোচকঃ চকরিয়া উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ
মন্তব্য করুন