দীর্ঘদিন ধরে দলীয় পদ ও প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কৃত থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর প্রায় দুই ডজন জেলা ও উপজেলা নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে এই সিদ্ধান্তকে দলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় ও সাংগঠনিক সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হলেও, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ জেলা পর্যায়ে দীর্ঘস্থায়ী বিদ্রোহ ও কোন্দলের অবসানের ইঙ্গিত।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আজ (৩ ডিসেম্বর ২০২৫) এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। পুনর্বহাল হওয়া নেতাদের তালিকা অনুসারে, সাতক্ষীরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পাবনা, জামালপুর, নাটোর, পিরোজপুর, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, খুলনা, রংপুর এবং সিরাজগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীরা পুনরায় তাদের সাংগঠনিক দায়িত্বে ফিরছেন।
এই পুনর্বহালের ক্ষেত্রে বান্দরবান জেলার একাধিক নেতার প্রত্যাবর্তন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একসময় দলীয় কোন্দলের জেরে বহিষ্কৃত হওয়া বান্দরবান জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ ও মো. আবুল কালাম, জেলা মহিলা দলের সাবেক নেত্রী হামিদ চৌধুরী, এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনসহ একাধিক প্রভাবশালী নেতার দলে ফেরা স্থানীয় সংগঠনকে নতুন করে শক্তিশালী করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়াও, পাবনার আটঘরিয়া, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, নাটোরের লালপুর, এবং খুলনার মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক এলাকা থেকে বহিষ্কৃত প্রভাবশালী নেতারাও এই ক্ষমা পেয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সাতক্ষীরা জেলাধীন ইশ্বরদীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল-ই-মোস্তফা টুটুল এবং রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য হুমায়ুন কবির মানিক।
দলীয় সূত্র মতে, এই নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পেছনে মূল কারণ হলো দলীয় কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনা এবং অভ্যন্তরীণ বিভেদ দূর করা। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে যে, যারা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছেন, তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে পুনরায় যুক্ত করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, জাতীয় আন্দোলনের পটভূমিতে তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধি এবং দলীয় ঐক্য জোরদার করতেই বিএনপি এই ‘ক্ষমা’ নীতি গ্রহণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় বা বহিষ্কৃত থাকা নেতাদের ফিরিয়ে এনে জেলা ও উপজেলা স্তরে সাংগঠনিক শূন্যতা পূরণ এবং নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার একটি কৌশল এটি। এই পদক্ষেপ স্থানীয় রাজনৈতিক কাঠামোতে নতুন উদ্যম যোগ করবে এবং বিশেষত আসন্ন দলীয় কর্মসূচিগুলিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বহিষ্কৃত নেতাদের পুনর্বহাল স্থানীয় নেতাদের মধ্যে স্বস্তি এনেছে এবং দলের ভেতরের কোন্দল কমিয়ে সার্বিক সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর পথ প্রশস্ত করবে বলেই মনে করছে বিএনপি।
পুনর্বহাল হওয়া নেতাদের মধ্যে কিছু নাম:
বেলাল-ই-মোস্তফা টুটুল (সাতক্ষীরা)
মোঃ ইউসুফ আলী প্রামানিক (পাবনা)
আব্দুল কুদ্দুছ (বান্দরবান)
মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন (নাইক্ষ্যংছড়ি)
মোছা: ফেরদৌসী বেগম (কুড়িগ্রাম)
হুমায়ুন কবির মানিক (রংপুর)
মন্তব্য করুন