
বিশেষ প্রতিনিধি, চকরিয়া, কক্সবাজার।
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একের পর এক বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে এক ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। আলোকিত মেধা বৃত্তি, ব্রাইট ফিউচার, কিশোর কণ্ঠ, আহমদ আলী মেধা বৃত্তি—এসব পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী। সামনে আসছে বেগম রোকেয়া মেধা বৃত্তি, যা নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে বাড়ছে আগ্রহ ও প্রস্তুতির উন্মাদনা।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় এসেছে মৌলভী ছাইদুল হক ফাউন্ডেশনের ব্যানারে শহিদ জিয়া স্মৃতি মেধা বৃত্তি পরীক্ষা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির মান্যবর সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের পৃষ্ঠপোষকতায় দীর্ঘ ছয় বছর পর অনাড়ম্বর পরিবেশে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষাটি চকরিয়া উপজেলা কেন্দ্রে আয়োজিত হলেও অভিভাবক মহল ভবিষ্যতে এ বৃত্তি চকরিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত করার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, সরকারি কলেজ কেন্দ্র হলে পরীক্ষার স্বচ্ছতা, সুষ্ঠু পরিবেশ এবং অংশগ্রহণের পরিধি আরও বাড়বে। তবে চলতি বছরের কেন্দ্রটি নিয়ে কিছু আলোচনা রয়েছে—অনেকে মনে করেন, এটি স্থানীয় রাজনীতির প্রভাবে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ বিষয়ে অভিভাবক ও সচেতন মহল প্রশাসনিক নজরদারি চেয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতের পরীক্ষাগুলো আরও নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়।
এবারের বৃত্তি পরীক্ষাগুলোতে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ বরাবরের মতোই শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। বিভিন্ন বৃত্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে এই বিদ্যালয় থেকে। শিক্ষকদের নিরলস পরিশ্রম, শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের অনুশীলন ও একাডেমিক শৃঙ্খলার ফলেই এই সাফল্য এসেছে।
ঠিক তার পরেই জায়গা করে নিয়েছে অনুশীলন একাডেমি। নতুন প্রজন্মের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েও তারা ধারাবাহিকভাবে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই প্রতিষ্ঠানটি এখন চকরিয়ার শিক্ষা মানচিত্রে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে।
অন্যদিকে উপজেলার অন্যান্য বিদ্যালয় থেকেও হাতেগোনা বা কোটায় শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে—যা সামগ্রিকভাবে এলাকার শিক্ষাব্যবস্থার জন্য আশাব্যঞ্জক।
করোনার দীর্ঘ বিরতি, অটোপাসের সংস্কৃতি এবং সাম্প্রতিক এইচএসসি ফলাফলের অস্থিরতা শিক্ষার্থীদের মনোবল কিছুটা দুর্বল করেছিল। কিন্তু ধারাবাহিক বৃত্তি পরীক্ষা তাদের আবার পড়াশোনায় ফিরিয়ে এনেছে। এখন প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতা, অনুশীলন ও মনোযোগী অধ্যয়নের এক নতুন ধারা গড়ে উঠছে।
অভিভাবকরাও এখন অনেক বেশি সচেতন। তারা বৃত্তি পরীক্ষাকে শুধু পুরস্কার নয়, বরং সন্তানদের পড়াশোনার মান যাচাইয়ের একটি মানদণ্ড হিসেবে দেখছেন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, চকরিয়া উপজেলায় সাম্প্রতিক বৃত্তি পরীক্ষাগুলো—বিশেষ করে শহিদ জিয়া স্মৃতি মেধা বৃত্তি—একটি নতুন শিক্ষাআন্দোলনের সূচনা করেছে। কোরক বিদ্যাপীঠ ও অনুশীলন একাডেমির নেতৃত্বে এই ধারাবাহিকতা যদি বজায় থাকে, তাহলে খুব শিগগিরই চকরিয়া হয়ে উঠবে কক্সবাজার জেলার সবচেয়ে শিক্ষাবান্ধব উপজেলা।
মন্তব্য করুন