
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় ৩৮টি ইটভাটার মধ্যে ৩৭টি অবৈধ। এসব ইটভাটার বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। এগুলোর বেশিরভাগই আবার বনাঞ্চল, লোকালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে এমনকি কৃষিজমির ওপর গড়ে উঠেছে। যা পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা সংক্রান্ত আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদফতর, বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।
জানা গেছে, লোহাগাড়া উপজেলায় চলতি বছর ৩৮টি ইটভাটায় ইট প্রস্তুতির কাজ পুরোদশে শুরু হয়েছে। তার মধ্যে শুধু চরম্বা ইউনিয়নে ইটভাটা রয়েছে ১৮টি। এর মধ্যে জিগজ্যাগ ৫টি আর বাকি ১৩টি প্রাচীন পদ্ধতির বয়লার ইটভাটা। বয়লার ইটভাটায় পোড়ানো হয় বনাঞ্চলের ইট। এসব ইটভাটার অধিকাংশই সংরক্ষিত বনাঞ্চল, লোকালয়, কৃষি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে ওঠেছে। টিলা ও কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে পাচার হচ্ছে এসব ইটভাটায়।
সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ শুরু করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও কাঁচামাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুচ্ছাফা চৌধুরীর মালিকানাধীন কেএন ব্রিকস লোহাগাড়া সদরের উজিভিটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২শ গজের মধ্যে অবস্থিত। এর ঠিক বিপরীতে সৈয়দ মাষ্টারের মালিকানাধীন এলবিসি ইটভাটা। আমিরাবাবাদ ইউনিয়নে কলাউজান গৌরসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে দেড়শ গজের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলমের মালিকানাধীন ইটভাটা বিকেবি।
পদুয়া ইউনিয়নের আধারমানিক সড়কে লোকালয়ে গড়ে ওঠেছে নুরুল আলম কোম্পানির মালিকানাধীন জেবিএম ব্রিকস, আলী সিকদার পাড়ায় আবদুল মোনাফ সওদাগরের মালিকানাধীন এমআর ব্রিকস, লেয়াকত মেম্বারের মালিকানাধীন পিবিএম ও ধলিবিলা সড়কে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশে মোরশেদের মালিকানাধীন এসবিএম ব্রিকস।
চরম্বা জামেউল উলুম মাদ্রাসার একশ গজের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা জামাল উদ্দিনের মালিকানাধীন এসএমবি ব্রিকস। চরম্বার সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও ফরেষ্ট অফিসের পাশে উপজেলা আওয়ামী শ্রমিকলীগের সাংগঠিক সম্পাদক খোরশেদ আলমের মালিকানাধীন এনবিকে ইটভাটা গড়ে উঠেছে। পুটিবিলা আবদুল খালেক শাহ স্টেশন সংলগ্ন আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন জনুর মালিকানাধীন বিবিসি ব্রিকস। এসব ইটভাটায় বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই বলে প্রশাসন সূত্রে জানা যায়।
লোহাগাড়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম সিকদার বলেন, অধিকাংশ ইটভাটার পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নেই। ইতোমধ্যে ইটভাটার মালিকরা লাইসেন্স সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) চট্টগ্রাম বিভাগীয় এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশের ইটভাটার ৯৯.৯৯ ভাগই অবৈধ। এসব ইটভাটার বৈধ কোনও কাগজপত্র নেই। এসব ইটভাটায় কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ ভূমিকা রাখা উচিত।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বৈধ কোনও কাগজপত্র ছাড়া ইটভাটা করা যাবে না। তবে এই মুহূর্তে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমান বলেন, পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া ইটভাটা করার
কোনও সুযোগ নেই। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র/ সময়ের আলো
মন্তব্য করুন