
মো. কামাল উদ্দিন, নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের খুটাখালী বনবিটের আওতাধীন সেগুনবাগিচা এলাকায় সরকারি পাহাড় কেটে চলছে একাধিক বসতবাড়ি নির্মাণের কাজ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড়ের পাদদেশে বিশাল অংশ কেটে সমতল করা হয়েছে। ওই জায়গায় রড-সিমেন্ট দিয়ে দুটি পাকা ঘর নির্মাণের কাজও প্রায় শেষের দিকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই দুটি ঘরের মালিক ফরিদুল আলম ও মো. মঈনুদ্দিন। তাঁরা বন কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে পাহাড় দখল করেছেন। একাধিক স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, খুটাখালী বনবিট কর্মকর্তা ও ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা যৌথভাবে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে পাহাড় দখল ও বসতবাড়ি নির্মাণের সুযোগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁদের জানানো হলেও তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেননি। বরং প্রকাশ্যেই চলছে পাহাড় কাটা ও ঘর নির্মাণের কাজ।
স্থানীয় এক পরিবেশ সচেতন ব্যক্তি বলেন, এই এলাকায় কারও অনুমতি ছাড়া একটা বাঁশও বসানো যায় না। অথচ এখন পাকা ঘর উঠছে। বোঝাই যাচ্ছে, ঘুষের মাধ্যমে অনুমতি কেনা হয়েছে। বন কর্মকর্তারা সব জানেন, কিন্তু অবৈধ লেনদেনের কারণে চুপ করে আছেন।
সরেজমিন ঘুরে আসার পর খুটাখালী বনবিট কর্মকর্তা নাজমুল ইসলামের কাছে পাহাড় কেটে বসতবাড়ি নির্মাণের সুযোগ ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, আমার জনবল নেই, নিরাপত্তা ঝুঁকিও আছে। দখলদারদের মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কথা বলার সময় তিনি বাড়ি নির্মাণকারীদের একজনকে কল করে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে আনেন এবং প্রতিবেদককে ‘ম্যানেজ’ করারও চেষ্টা করেন।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, একজন সরকারি কর্মকর্তা যদি জনবল বা নিরাপত্তা সমস্যার অজুহাতে আইনি দায়িত্ব পালন না করেন, তবে সেই দায়িত্ব কে নেবে?
একজন সাবেক বন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসব অজুহাত আসলে দুর্নীতিকে আড়াল করার কৌশল। বন কর্মকর্তারা চাইলে প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারেন। কিন্তু গোপন লেনদেনের কারণে তাঁরা তা করেন না।
পরিবেশবিদদের মতে, খুটাখালী ও ফুলছড়ি রেঞ্জের পাহাড়ি বনাঞ্চল একসময় হাতি, বন্য শূকর ও হরিণের বিচরণভূমি ছিল। এখন সেখানে ইট, বালু ও সিমেন্টের গন্ধ। তাঁরা বলেন, পাহাড় কাটা ও বনভূমি দখল বন্ধ না করলে কয়েক বছরের মধ্যেই এই এলাকার পাহাড় বিলুপ্ত হবে। সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা কংক্রিটের মরুভূমি দিয়ে যাব।
এ বিষয়ে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন বলেন, পাহাড় কেটে বসতবাড়ি নির্মাণের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
[উল্লেখ্য: বাংলাদেশ বন আইন, ১৯২৭ অনুযায়ী সরকারি বনভূমি দখল বা সেখানে স্থাপনা নির্মাণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর শাস্তি ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুসারে পাহাড় কাটা বা প্রাকৃতিক ভূপ্রকৃতি পরিবর্তনও দণ্ডনীয় অপরাধ, যার শাস্তি কারাদণ্ড ও জরিমানা উভয়ই। কিন্তু মাঠপর্যায়ে এসব আইনের প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না।]
মন্তব্য করুন