
লামা উপজেলার ফাইতং এবং চকরিয়ার মানিকপুর এলাকায় পরিবেশ অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশাসনের যৌথ অভিযানে একাধিক ইটভাটা উচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। অনুমোদনবিহীন প্রযুক্তি, দূষণ এবং পরিবেশগত ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে এগুলো ভাঙা হলেও স্থানীয় শ্রমিক ও ভাটা মালিকদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
অভিযানের ফলে ইতোমধ্যে কিছু ভাটার চিমনি ও কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে যে শ্রমিকরা দিনের আয়ে দিন চালান—তাদের জীবিকা যেন মুহূর্তেই থমকে গেছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, এ অঞ্চলে সক্রিয় ভাটাগুলোতে প্রায় ২০ হাজারের মতো শ্রমিক মৌসুমি বা অস্থায়ীভাবে কাজ করেন। বেশিরভাগই নিম্নআয়ের পরিবার, যাদের জীবিকা পুরোপুরি নির্ভর করে ভাটার দৈনিক উপার্জনের ওপর।
জীবিকা হারানোর ভয়
উচ্ছেদ অভিযানের দৃশ্য সামনে আসতেই শ্রমিকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে অভিযোগ করেন—পরিকল্পনা ছাড়া এমন অভিযান তাদের অসহায় করে ফেলবে। অনেক শ্রমিক জানান, তারা বছরের এই মৌসুমে ভাটার ওপরই নির্ভর করে সংসার খরচ, ঘরভাড়া, ঔষধ ও সন্তানের পড়ালেখার খরচ চালান। এখন ভাটা বন্ধ হলে তাদের সামনে তাত্ক্ষণিক কোনো বিকল্প উৎস নেই।
শ্রমিকদের ভাষ্য, কোনো ধরনের পুনর্বাসন বা বিকল্প কর্মসংস্থানের ঘোষণা ছাড়া ভাটা ভেঙে দিলে ক্ষুধা–দারিদ্র্য আরও বেড়ে যাবে। স্থানীয় বাজার–বণিকদেরও আশঙ্কা, ভাটার শ্রমিকরা আয় হারালে এর প্রভাব পুরো এলাকার অর্থনীতিতে পড়বে।
মালিকদের পুঁজি ঝুঁকিতে
অন্যদিকে ভাটা মালিকরা বলছেন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে রূপান্তর করা বা আধুনিকায়নের পরিকল্পনা করতে সময় লাগে এবং তা ব্যয়বহুল। ভাটাগুলোর একটি বড় অংশ বহুদিন ধরে স্থানীয় নির্মাণকাজের চাহিদা মেটাচ্ছে। তারা মনে করছেন, হঠাৎ অভিযান তাদের কোটি টাকার পুঁজি ও ঋণের দায়কে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অনেকে দাবি করছেন, ধাপে ধাপে নীতি বাস্তবায়নের পরিবর্তে সরাসরি উচ্ছেদ করা হলে শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ইটের বিকল্প না থাকলে নির্মাণকাজে চাপ
বিশেষ প্রতিনিধি লামা,বান্দরবান।
স্থানীয় ঠিকাদার ও নির্মাণকাজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ওই অঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি উন্নয়নকাজ চলমান। ইটভাটা কমে গেলে ইটের সরবরাহ সংকট দেখা দিতে পারে, যা নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। ফলে সড়ক, কালভার্ট, আবাসন প্রকল্প—সবকিছুর কাজ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তাদের মতে, পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগ অবশ্যই প্রয়োজন; কিন্তু বিকল্প, টেকসই এবং বাজার–উপযোগী সমাধান না দিয়ে গণহারে ভাটা উচ্ছেদ করলে উন্নয়ন প্রক্রিয়াই ধীর হয়ে যাবে।
পরিবেশগত যুক্তি থাকলেও প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি নীতি
প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনুমোদনবিহীন ভাটা ও দূষণকারী প্রযুক্তির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভিযান চলছে। এসব ভাটার ধোঁয়া ও কেমিক্যালের কারণে কৃষিজমি, মানুষের স্বাস্থ্য এবং স্থানীয় পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়—এ কারণেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ সুরক্ষা ও জীবিকা—এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে। দেশজুড়ে টেকসই নির্মাণ সামগ্রীর জন্য পরিকল্পিত নীতি, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদনের বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি না করলে হঠাৎ উচ্ছেদ ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করবে।
স্থানীয়দের প্রত্যাশা
এলাকার সাধারণ মানুষ মনে করেন, ভাটা উচ্ছেদ যদি পরিবেশগত কারণে করতেই হয়—তবে শ্রমিকদের পুনর্বাসন, মালিকদের প্রযুক্তিতে রূপান্তরের জন্য সময়–দেওয়া এবং নির্মাণ খাতে বিকল্প সামগ্রী নিশ্চিত করা জরুরি। নইলে সমস্যা কমার পরিবর্তে নতুন ধরনের সংকট তৈরি হবে।
তাদের বক্তব্য, উন্নয়ন–বাধা, শ্রমিকদের জীবিকা সংকট এবং নির্মাণ সামগ্রীর ঘাটতি—এই সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সরকার, ভাটা মালিক ও পরিবেশ অধিদফতরের মধ্যে সমন্বিত নীতি প্রয়োজন। শুধুমাত্র ভাটা ভেঙে দিলে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা থেকে যাবে।
🔴প্রধান উপদেষ্টাঃ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ভুট্টো, 🔴নির্বাহী সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এম জুনাইদ উদ্দিন, বার্তা সম্পাদকঃ এইচ এম হাছিব তাজোয়ার
News Mail: dainikpathakkanta@gmail.com, Head Office: Hathirpul, Motaleb plaza nearest, Dhaka, Cox'sBazar( Chakaria) Office: SabujBag Haji Laila Mention, Chakaria Pourashova.
Design and Develop By Coder Boss